শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:০৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ
ভারতীয় ৪৪০ বোতল মদসহ পিকআপ ভ্যান আটক শ্রীবরদীতে তালা ভেঙ্গে পরীক্ষা নিলেন ইউএনও মাভাবিপ্রবিতে অপ্রীতিকর অবস্থায় পরকীয়া প্রেমিকের সাথে আটক দুই সন্তানের মা প্রার্থিতা স্থগিতের পর নতুন চমক, নাদিরা মিঠু বিএনপির মনোনীত প্রার্থী কাস্তের আঘাতে কলেজছাত্রী জখম, অভিযুক্ত সজীব জনতার হাতে আটক ডিমলায় কৃষকদের মাঝে সার ও ধান বীজ বিতরণ দোয়ারাবাজার সীমান্তে চেলা নদীতে বালু উত্তোলনকালে মাটি চাপায় যুবক আহত মাদারীপুরে ২৪ ঘন্টার আলটিমেটাম দিয়ে অবরোধ তুলে নিলেন শিক্ষার্থী চারঘাটে পৌরসভা মাস্টার প্ল্যান সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শকরণ সভা চারঘাটে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত লালপুরে ছেলের প্রতি অভিমান, মায়ের মর্মান্তিক আত্মহত্যা ঝিনাইদহে ৩ বছরের সাবার লাশ মিলল প্রতিবেশীর ঘরে সলিয়াবাকপুরে শ্রমিকদলের আয়োজনে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মোনাজাত কমলনগরে চকলেট ও টাকার লোভ দেখিয়ে শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা বাউফলে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের আগুনে পুড়ে গেল ঘর খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় পবিপ্রবি জিয়া পরিষদের মিলাদ ও দোয়া মাহফিল শিবচরে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘Career Path and Higher Education Expo-2025’ অনুষ্ঠিত শেরপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলামের নির্বাচনী আলোচনা সভা নাসির নগরে ০৮ বছরের এক শিশুকে ধর্ষনের পর হত্যার অভিযোগ

৩৬ ঘণ্টার হরতালে বন্ধ যোগাযোগ

নোমাইনুল ইসলাম, বাঘাইছড়ি (রাঙামাটির) প্রতিনিধি:

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগে কোটা বৈষম্যের প্রতিবাদে কোটাবিরোধী ঐক্যজোট ঘোষিত( ২০ ও ২১ নভেম্বরের) ৩৬ ঘণ্টার হরতালকে সমর্থন জানিয়ে হরতাল পালন করেছেন উপজেলার যুব ও ছাত্র জনতা।

হরতালের কারণে বাঘাইছড়ি ও আশপাশ এলাকার হাজারো পরীক্ষার্থী ২১ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য রাঙামাটি জেলা পরিষদের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে রাঙামাটি যেতে পারছেন না। এতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক অসংখ্য শিক্ষার্থী মারাত্মক ভোগান্তির মুখে পড়েছেন। চাকরী প্রত্যাশিদের দাবি এই সমস্যার সমাধান করে অনতিবিলম্বে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহন করা হোক।

পরীক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, জেলা পরিষদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে স্বচ্ছতার ঘাটতি, কোটা বাণিজ্য এবং নানা অনিয়ম চলছে। তাদের দাবি— “কোটা প্রথা চলবে না— চলবে না।” “রাঙামাটি জেলা পরিষদের নিয়োগ বাণিজ্য চলবে না— চলবে না।”

হরতালের কারণে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে না পারায় বহু মেধাবী প্রার্থী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের অভিযোগ ন্যায়সঙ্গত, স্বচ্ছ এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত না হলে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। স্থানীয় সচেতন মহলও প্রশ্ন তুলেছেন, এমন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণের আগে কর্তৃপক্ষ কেন এলাকার চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিল না।

২০২২ সালে বিজ্ঞপ্তি কিন্তু নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য রাঙামাটি জেলা পরিষদ ২০২২ সালের ২৯ মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সে সময় যারা আবেদন করেছিলেন, তাদের মধ্যে যোগ্য প্রার্থীদের ঠিকানায় অ্যাডমিট কার্ড পাঠানো হয়। কিন্তু নানা কারণে সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।

সম্প্রতি জেলা পরিষদ পুনরায় সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি ২০২২ সালের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যোগ্য প্রার্থীদের তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে এবং জানানো হয়েছে— তারা নতুন করে আবেদন করতে হবে না।

২০২২ সালের আবেদনকারীদের মধ্য থেকে বাঘাইছড়ি উপজেলার মোট ৮৯৬ জনকে এবার যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।

যোগ্য তালিকায় বাদ পড়া, বয়সসীমা ও গরমিল নিয়ে প্রশ্ন তালিকা প্রকাশের পর একাধিক প্রার্থী জানিয়েছেন, ২০২২ সালে তারা যোগ্য বিবেচিত হয়েছিলেন এবং অ্যাডমিট কার্ডও পেয়েছিলেন। কিন্তু এবার প্রকাশিত যোগ্য তালিকায় তাদের নাম নেই। এর কারণ কী— সে বিষয়টি তারা জানতে চান।

আরও অভিযোগ উঠেছে, ২০২২ সালে যাদের বয়সসীমা বৈধ ছিল এবং তারা অ্যাডমিট কার্ডও পেয়েছিলেন— ২০২৫ সালে এসে বয়সসীমা পার হওয়ায় তাদের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের প্রশ্ন— তাহলে তাদের করণীয় কী? কীভাবে জেলা পরিষদ তাদের ক্ষতিপূরণ দেবে?
যোগ্য তালিকায় বয়স সংক্রান্ত গরমিলও পাওয়া গেছে। তালিকার ৭, ১২০, ১১৫ ও ৭৭৮ নম্বর প্রার্থীরা— দক্ষিণ শিজক মুখের সজীব চাকমা, দুরছড়ির অতীশ চাকমা, দুরছড়ির খাগড়াছড়ির আঁখি চাকমা, মারিশ্যার কদমতলীর প্রতিম চাকমা— তাদের বয়স বিবেচনায় দেখা যায়, ২০২২ সালে এই চারজনের কেউই ১৮ বছর পূর্ণ করেননি।

এছাড়া তালিকার ১২৩ নম্বরে তুলাবান এলাকার কুসুমিকা চাকমা এবং ৪৪২ নম্বরে পিতালীছড়ার জয়লাল চাকমা— তাদের বয়স হিসেব করে দেখা যায়, ২০২২ সালে তাদের বয়স যথাক্রমে ৩২.২ বছর এবং ৩৭.৯ বছর।

বয়সসীমা কমানোয় পার্বত্য অঞ্চলে তীব্র প্রতিক্রিয়া রাঙামাটি জেলা পরিষদের চাকরির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৪০ বছর থেকে কমিয়ে ৩২ বছরে আনার সিদ্ধান্তে পার্বত্য অঞ্চলের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাদের মতে, এই সিদ্ধান্ত পাহাড়ি-বাঙালি সব সম্প্রদায়ের তরুণদের দীর্ঘদিনের শিক্ষা-বাস্তবতা ও কর্মসংস্থানের সীমাবদ্ধতাকে উপেক্ষা করে নেওয়া হয়েছে।

পার্বত্য অঞ্চলে শিক্ষার হার জাতীয় গড়ের তুলনায় এখনও কম। অনেক তরুণ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক কারণে উচ্চশিক্ষা শেষ করতে দেরি করেন— কারও কারও স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করতেই ৩০ বছর লেগে যায়। ফলে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ৪০ বছর বয়সসীমা তাদের জন্য ছিল একটি স্বস্তি। নতুন সিদ্ধান্তে তারা চাকরির দৌড় থেকে কার্যত ছিটকে পড়বেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবতা বিবর্জিত, বৈষম্যমূলক এবং প্রান্তিক তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগকে আরও সংকুচিত করবে।

প্রসঙ্গত, আবেদনকারীদের বড় অংশই দূর-দুর্জন পাহাড়ি এলাকার, যারা নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে শিক্ষা ও চাকরিতে পিছিয়ে। সরকারি চাকরি তাদের জন্য নিরাপত্তা, মর্যাদা ও উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ পথ— যা বয়সসীমা কমিয়ে কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি বয়সসীমা কমানোর সিদ্ধান্তে একদিকে পূর্বপ্রস্তুত প্রার্থীরা হতাশ— অন্যদিকে নতুন আবেদনকারীরাও অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। অনেকেই বলছেন— এলাকাভেদে বাস্তবতা বিবেচনায় আলাদা নীতিমালা নেওয়া যেত।

রাঙামাটি জেলা পরিষদের কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি সিদ্ধান্তটি দ্রুত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের একজন সাবেক কর্মকর্তা বলেন— “এই সিদ্ধান্ত উন্নয়নের বদলে বঞ্চনা তৈরি করবে। পার্বত্য অঞ্চলের বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়াই উচিত ছিল।”

মানবাধিকারকর্মীরা বলেন, এই সিদ্ধান্ত শুধু বয়সসীমা কমানোর বিষয় নয়; এটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি রাষ্ট্রীয় অবহেলার প্রতিচ্ছবি। তারা দ্রুত বয়সসীমা ও কোটা সংস্কার পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩